কারো ঘরে লাল পলিথিনের বেলুন। কারো ঘরে হলুদ বেলুন। আবার কারো ঘরে নীল বেলুন। কারো ঘরের খাটের নীচে বেলুন। কারো ঘরের মাঁচার উপড়ে বেলুন। কারো গোয়াল ঘরে বেলুন। গ্রামের পর গ্রাম ঘরে ঘরে বেলুন। যেন গ্রামগুলো বেলুনের গ্রাম। তবে এসব কিন্তু খেলনা বেলুন নয়। এসব বেলুন গ্যাস সঞ্চয় করে রাখার জন্য পলিথিনের তৈরি ভয়ংকর বেলুন।
পলিথিনের বেলুন তৈরি করে এক ধরনের মেশিনের সাহায্যে পাইপ থেকে গ্যাস টেনে এনে জমা করা হয়। পরে তা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। এতে যেকোনো সময় বেলুন লিকেজ হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তবুও থেমে নেই বেলুন ব্যবহারের। প্রতিনিয়তই বাড়ছে বেলুন বোমা ব্যবহারকারীর সংখ্যা।নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউপির প্রায় ১০টি গ্রামে ভয়ংকর বেলুনে চলছে রান্নাবান্নার কাজ। সোনারগাঁও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেলুন বোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তিতাস কর্তৃপক্ষ বলছে তারা এসব ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
এসব বেলুন বিস্ফোরণে ভস্মীভূত হতে পারে গ্রামের পর গ্রাম। রূপগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের বেলুন ব্যবহার করে রান্নাবান্নার কাজ চলছে। লাইনে গ্যাস না থাকায় এমনটা করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে বিষয়টি বেশ আতঙ্কিত রূপগঞ্জের সচেতন সমাজ।সরেজমিনে উত্তরপাড়া এলাকার জীবন চন্দ্র সরকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির টয়লেটের উপড়ে লাল পলিথিনের বেলুন। তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইন থেকে পাইপের মাধ্যমে পলিথিনে গ্যাস উঠানো হচ্ছে। পলিথিন থেকে আরেকটি পাইপ চুলায় দেয়া আছে। পরে সারাদিন চালানো হয় রান্নার কাজ।
বেলুনে গ্যাস বিষয়ে স্থানীয় কবির হেসেন বলেন, বাড়িত গ্যাস থাহে না। হের লেইগ্যা গ্যাস বেলুন নিছি। সারা রাইত গ্যাস তুইলা রাহি। দিনে রান্ধন-বান্ধন করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এত্তো আইন-কানুন জানি না। দরকার পড়ছে, নিছি।আরেক বাসিন্দা হাবিব রহমান বলেন, হগলতে নিছে, আমিও নিছি। এভাবে গ্যাস নেয়া ঝূঁকিপূর্ণ জানেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এইডা আর কি অইবো? গ্যাসতো উইড়া যায়গা। কিছু অইবো না।
জানা যায়, ২০১৫ সালের শুরুতে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে অবৈধ গ্যাস সঞ্চালন লাইন টানা হয়। এ লাইন থেকে সংযোগ নিতে প্রতি বাড়ি থেকে এককালীন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয় স্থানীয়রা। যারা গ্যাসের সংযোগ নিজের বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করছেন তারা এখনো বিল পরিশোধ করেননি। ফলে, গ্যাসের চাপ বাড়াতে কেউ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডকে অভিযোগ জানাতে পারেন না। এজন্য ঝুঁকি জেনেও ১৫টি গ্রামের সাধারণ মানুষ কয়েক শতাধিক বাড়িতে এভাবে পলিথিনে গ্যাস সংরক্ষণ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে, সোনারগাঁ কার্যালয়ের (ব্যবস্থাপক) মেজবাহউর রহমান বলেন, এমন কথা আজ নতুন শুনলাম। এভাবে গ্যাস সঞ্চয় করে রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পলিথিন গলে গেলে কিংবা ছিদ্র হয়ে গেলে আগুন লেগে যেতে পারে। পুড়ে যেতে পারে বাড়িঘর। খোঁজ নিয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি। রূপগঞ্জের ইউএনও শাহ নুসরাত জাহান বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? এটা খুবই অন্যায় কাজ। এরপর ঝুঁকি! আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।সূত্র:ইত্তেফাক